গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ: সতর্কতা ও করণীয়

সুমি আর রাশেদ দম্পতির জন্য এটি ছিল স্বপ্নের মতো মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সুমি জানতে পারলেন যে তিনি মা হতে চলেছেন। আনন্দের সাথে সাথে দুশ্চিন্তাও ছিল কী করবেন, কী করবেন না? তা নিয়ে।

বড়দের কাছ থেকে নানা পরামর্শ পাচ্ছিলেন, কিন্তু ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া তথ্য একে অপরের সাথে মিলছিল না।

একদিন, বাড়ির কাজ করতে গিয়ে ভারী কিছু তুলতেই পেটে হালকা টান লাগল। আতঙ্কিত হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি বললেন, “আপনার এখন সতর্ক থাকা খুব দরকার। গর্ভাবস্থায় কিছু কাজ একেবারেই নিষিদ্ধ। গর্ভাবস্থায় সতর্কতা গুলো নিয়ম মেনে চলতে হবে।”

আপনার যদি সুমির মতো প্রশ্ন থাকে, তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্য ।

গর্ভাবস্থায় যে কাজগুলো এড়িয়ে চলা উচিত

জেনে নিন গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ:

গর্ভাবস্থায় কিছু কাজ মায়ের ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই এই সময়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কী কী কাজ করা নিষেধ।

ভারী কিছু তোলা

গর্ভাবস্থায় ভারী ওজন তোলা নিষিদ্ধ কারণ এটি পেটের পেশীতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভপাত বা প্রি-টার্ম লেবারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেওয়া

মানসিক চাপ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম বা বই পড়ার মতো ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন

ধূমপান ও অ্যালকোহল গর্ভের শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি জন্মগত ত্রুটি, কম ওজনের শিশুর জন্ম, এমনকি মৃত শিশুর জন্মের ঝুঁকি বাড়ায়।

কাঁচা বা অপাস্তুরিত খাবার খাওয়া

কাঁচা মাছ, কাঁচা দুধ বা অপাস্তুরিত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা

ঘরের কাজের সময় কিছু ক্লিনিং প্রোডাক্ট, পেইন্ট, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো শিশু বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ

চা, কফি বা কোলা জাতীয় পানীয় থেকে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে গর্ভপাত বা শিশুর কম ওজনের জন্ম হতে পারে। তাই দিনে ২০০ মিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করাই ভালো।

পেটে চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায় ভারী ব্যায়াম বা পেটে চাপ পড়ে এমন কোনো যোগব্যায়াম করলে পেটের পেশীতে টান পড়তে পারে, যা গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

খুব বেশি লম্বা সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা

দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে ব্যথা হতে পারে এবং রক্তচাপ কমতে পারে। তাই কাজের সময় মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।

কাঁচা মাংস ধোয়া বা রান্না করা

কাঁচা মাংসের সংস্পর্শে এলে টক্সোপ্লাজমোসিস নামক সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

FAQs: সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
১. গর্ভাবস্থায় কী ধরণের ব্যায়াম করা নিরাপদ?

উত্তর: হাঁটাহাঁটি, প্রি-ন্যাটাল যোগব্যায়াম, হালকা স্ট্রেচিং নিরাপদ। তবে যেকোনো ব্যায়াম শুরুর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

২. গর্ভাবস্থায় চুলে রং করা নিরাপদ কি?

উত্তর: প্রথম ত্রৈমাসিকে চুলে কেমিক্যালযুক্ত রং ব্যবহার করা এড়ানো ভালো, কারণ এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকতে পারে।

৩. কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?

উত্তর: কাঁচা বা অপাস্তুরিত দুগ্ধজাত খাবার, বেশি মসলাযুক্ত ও ভাজা খাবার, অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও ফাস্ট ফুড এড়ানো উচিত।

৪. কীভাবে গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কমানো যায়?

উত্তর: পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মেডিটেশন, পছন্দের বই পড়া, পরিবার ও বন্ধুর সাথে সময় কাটানো এবং সঠিক ডায়েট মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৫. গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক পজিশন কী?

উত্তর: বাঁ পাশ ফিরে শোয়া সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি শিশুর রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে ও মায়ের জন্যও আরামদায়ক।

গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ সময়, যেখানে মায়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। তাই, কিছু কাজ এড়িয়ে চলা খুব জরুরি। পরিবারের সদস্যদেরও সচেতন থাকা দরকার যাতে গর্ভবতী মা নিরাপদ ও সুস্থ থাকেন।

আপনি যদি গর্ভাবস্থার কোনো অভিজ্ঞতা বা পরামর্শ শেয়ার করতে চান, কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top