কেউ যখন গর্ভবতী হয় তখন গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয় এবং এর সমাধানের বিষয়ে ধারণা দরকার দরকার। এতে সমস্যা গুলো থেকে রেহায় পাওয়া যায় যেমন টা রিমার ক্ষেত্রে হয়েছিল।
রিমার যখন জানতে পারলেন তিনি মা হতে চলেছেন তখন এটি তার ও পরিবারের সকলের জন্য আনন্দের মুহূর্ত ছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হলো নানা শারীরিক পরিবর্তন বমিভাব, মাথাব্যথা, পিঠের ব্যথা, এমনকি ঘুমের সমস্যাও। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন, এই পরিবর্তনগুলো কি স্বাভাবিক ? নাকি এটি কোনো বড় সমস্যার ইঙ্গিত ?
আপনিও কি এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কী কী সমস্যা হতে পারে , তাছাড়া গর্ভাবস্থায় সতর্কতা হিসেবে কি কি জানা উচিত এবং কীভাবে সেগুলোর সমাধান করা যায়।
জানুন গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয়:

বমিভাব ও সকালবেলার অসুস্থতা (Morning Sickness):
প্রথম তিন মাসের মধ্যে অধিকাংশ গর্ভবতী নারীরা বমিভাব এবং সকালবেলার অসুস্থতায় ভোগেন। হরমোনজনিত পরিবর্তন এর প্রধান কারণ।
সমাধান:
- দিনে বারবার ছোট ছোট খাবার খান।
- আদা চা পান করুন।
- পানিশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- ডাবের পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে পারেন।
- প্রয়োজন গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকা তৈরী করুন এবং তা মেনে চলুন।
মুড সুইংস ও মানসিক চাপ:
হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক নারী উদ্বেগ, হতাশা এবং মানসিক চাপে ভোগেন। এই সময় মুহুর্তের মধ্যে মুড পরিবর্তন হতে পারে, বলা যায় এই ভালো তো এই খারাপ। মেজাজ খিটখিটে হয়।
সমাধান:
- ধ্যান ও যোগব্যায়াম করুন ।।
- পরিবার ও কাছের মানুষের সাথে কথা বলুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
কোমর ব্যাথা:
গর্ভাবস্থায় বেশীর ভাগ নারীর এই সমস্যা হয়ে থাকে। বলা হয় প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৫০ জনেরই এই সমস্যা দেখা দেয়।
সমাধান:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। প্রায় ৯/১০ ঘন্টা।
- বিশ্রাম বা ঘুমানোর সময় পা কিছুটা উঁচুতে রেখে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। যেমন: পায়ের নিচে বালিশ রেখে বা প্রয়োজনে প্রেগন্যান্সি পিলো ব্যবহার করতে পারেন।
- কুঁজো হয়ে বসা বা নিচ থেকে যেকোনো জিনিস না তুললে ভালো।
- ভারি বা পরিশ্রম হয় এমন কাজ করবেন না।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
প্রোজেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি এবং হজম প্রক্রিয়ার ধীরগতি কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।
সমাধান:
- আঁশজাতীয় খাবার যেমন: শাক-সবজি, তাজা ফলমূল বেশী করে খেতে হবে।
- ইসবগুলের ভূষি খেতে পারেন।
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- হালকা ব্যায়াম করুন বা হাটা চলার অভ্যাস করুন। দিনে ১৫/২০ মিনিট হাঁটুন।
বুক জ্বালাপোড়া বা এসিডিটি:
ভাজাপোড়া খাবার বা অতিরিক্ত মসলা ও তেলযুক্ত খাবার খাওয়া ত্যাগ করতে হবে কারণ এতে এই সমস্যাটা বেশী হয়।
সমাধান:
- একসাথে অনেক বেশী খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
- খাওয়ার পরপরই বিছানায় শুতে যাওয়া যাবেনা।
- ডাক্তার গ্যাস্টিকের ঔষধ দিলে তা ঠিক মতো খেতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ:
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে যা প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া পর্যন্ত গড়াতে পারে।
সমাধান:
- লবণ কম খান।
- রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
পায়ে ব্যথা ও ফোলা:
গর্ভাবস্থায় রক্তসঞ্চালনের পরিবর্তনের কারণে অনেক নারীর পায়ে ব্যথা ও ফোলা দেখা যায়।
সমাধান:
- পা উঁচু করে বিশ্রাম নিন।
- ম্যাসাজ করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
ঘুমের সমস্যা:
বড় হতে থাকা পেট এবং মানসিক চাপ অনেক সময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
সমাধান:
- সঠিকভাবে শোয়ার পজিশন অনুসরণ করুন।
- আরামদায়ক বিছানা ব্যবহার করুন।
- ধ্যান করুন।
অ্যানিমিয়া (রক্তশূন্যতা):
লোহিত রক্তকণিকা কমে গেলে মা এবং শিশুর জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
সমাধান:
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান।
- ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট নিন।
- সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খান।
জরুরি পরিস্থিতি যখন ডাক্তার দেখানো জরুরি:

- যদি রক্তক্ষরণ হয়।
- অতিরিক্ত মাথাব্যথা বা ঝাপসা দৃষ্টি দেখা দেয়।
- পেটের তীব্র ব্যথা হয়।
- বাচ্চার নড়াচড়া হঠাৎ কমে যায়।
- অতিরিক্ত পানি জমতে শুরু করলে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কম লবণযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং নিয়মিত ডাক্তার পরামর্শ নিলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২. গর্ভাবস্থায় কী ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?
হালকা হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। তবে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩. বাচ্চার নড়াচড়া কখন অনুভব করা যায়?
সাধারণত ১৮-২৫ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার প্রথম নড়াচড়া অনুভূত হয়।
৪. কীভাবে গর্ভকালীন বিষণ্ণতা দূর করা যায়?
পরিবারের সমর্থন, যোগব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
৫. কোন খাবার গর্ভাবস্থায় পরিহার করা উচিত?
কাঁচা মাছ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা উচিত।
গর্ভাবস্থা জীবনের একটি অনন্য অভিজ্ঞতা, তবে এটি কিছু চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে। এই সময়ে সঠিক যত্ন ও সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের সতর্কতার বিষয় গুলো মেনে চললে ভালো।
মূলত হরমোন পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থায় নানান সমস্যা হয়ে থাকে তবে সবার ক্ষেত্রে একই সমস্যা ও সমাধান কার্যকর নয়।
গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয় এর বিষয়ে যদি আপনার কোনো জানার থাকলে বা জানানোর থাকলে তাহলে কমেন্ট করতে পারেন আর না হয় আমাদেরকে মেইল করতে পারেন।
আপনি যদি গর্ভাবস্থার যেকোনো সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হন, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সুস্থ ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে নিজেকে যত্নে রাখুন।