গর্ভবতী হওয়ার পর নানান ধরনের সমস্যা দেয়া দেখা দেয় এতে অনেকেই দুঃচিন্তায় পড়ে যায়, তাই গর্ভবতী হওয়ার পর করনীয় বিষয় হিসেবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় এই বিষয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে জেনে নিন। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো জেনে নিতে পারবেন।
আমার নাম ফারজানা আক্তার। আমি একজন স্কুলশিক্ষিকা এবং একজন মা। যখন আমার প্রথম সন্তান গর্ভে আসে, তখন আমি আনন্দের সঙ্গে স্বপ্ন দেখছিলাম তার জন্মের দিনটি নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ একদিন ডাক্তারের থেকে জানতে পারি “আমার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েছে।” আমার চোখের সামনে যেন অন্ধকার নেমে এলো। বুঝতেই পারছিলাম না কী করব, কোথা থেকে শুরু করব।

আমি তখন ২৬ সপ্তাহের গর্ভবতী। গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT) করানোর পর রিপোর্টে দেখা গেল আমার ফলাফল ছিল
- ফাস্টিং: ৬.৩ mmol/L
- ১ ঘণ্টা পর: ১১.২ mmol/L
- ২ ঘণ্টা পর: ৯.৮ mmol/L
ডাক্তার বললেন, এটি গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস (GDM), যা গর্ভাবস্থায় অনেক নারীরই হয়ে থাকে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে মাত্রাগুলো নিয়ন্ত্রণে না আসায় ইনসুলিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়?
গর্ভাবস্থায় অনেক মা-ই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যা সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি বাড়ে। যদি ফাস্টিং ব্লাড সুগার ৫.৩ mmol/L এর বেশি হয় বা ২ ঘণ্টা পরের রক্তে গ্লুকোজ ৬.৭ mmol/L ছাড়িয়ে যায়, তবে ইনসুলিন নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র ডায়েট বা ব্যায়ামে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে ডাক্তার ইনসুলিনের পরামর্শ দেন। ইনসুলিন ভয় পাওয়ার কিছু নয়, বরং এটি মা ও শিশুর জন্য সুরক্ষার ঢাল।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ধারণে সাধারণত তিনটি ধাপে গ্লুকোজ টেস্ট করা হয়। গড়পড়তা মান হলো:
- ফাস্টিং ব্লাড সুগার: ৫.১ mmol/L এর বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ
- ১ ঘণ্টা পর: ১০.০ mmol/L এর বেশি হলে
- ২ ঘণ্টা পর: ৮.৫ mmol/L এর বেশি হলে
যদি এই মাত্রাগুলো নিয়মিত ও ডায়েট, ব্যায়াম ও লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে না আসে, তখন ইনসুলিন থেরাপি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে।
কেন ইনসুলিন নেওয়া জরুরি?
গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন না নিলে শিশুর ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে (macrosomia), প্রসব জটিল হতে পারে, এমনকি শিশুর জন্মের পর হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকিও থাকে। মা ও শিশুর উভয়ের নিরাপত্তার জন্য তাই নিয়মিত মনিটরিং ও ইনসুলিন ছিল আমার বাঁচার অন্যতম উপায়।
আমি কীভাবে ইনসুলিন নিয়েছি?
প্রথমে দিনে দু’বার ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হতো। পরবর্তী পরীক্ষায় যখন ফলাফল নিয়ন্ত্রণে আসে, তখন ডাক্তার ইনসুলিনের মাত্রা সামান্য কমিয়ে দেন। জন্মের আগপর্যন্ত নিয়মিত মনিটরিং করেছি, প্রতিটি খাবারে সচেতন থেকেছি এবং নিজের প্রতি যত্নশীল ছিলাম।

ইনসুলিন না নিলে কী সমস্যা হতে পারে?
- শিশুর ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে যেতে পারে (Macrosomia)
- প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হতে পারে
- জন্মের পর শিশুর রক্তে সুগার খুব কমে যেতে পারে (Hypoglycemia)
- মা’র ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
টেস্ট টাইপ | রেফারেন্স মান | ইনসুলিন দরকার হলে |
---|---|---|
ফাস্টিং | ≤ ৫.০ mmol/L | > ৫.১ mmol/L |
১ ঘণ্টা | ≤ ১০.০ mmol/L | > ১০.০ mmol/L |
২ ঘণ্টা | ≤ ৮.৫ mmol/L | > ৮.৫ mmol/L |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট হালকা হাঁটা করা
- কম কার্বোহাইড্রেট ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ
- নিয়মিত ব্লাড সুগার মনিটর করা
- মানসিক চাপ এড়ানো ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা

FAQ: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন
১. গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মানেই কি ইনসুলিন নিতে হবে?
না, অনেক ক্ষেত্রে শুধু ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে যদি তা কাজ না করে, তখন ইনসুলিন নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
২. ইনসুলিন নিলে কি শিশুর কোনো ক্ষতি হয়?
না, ইনসুলিন মা ও শিশুর উভয়ের জন্য নিরাপদ। এটি শুধু রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. ইনসুলিন থেরাপি কি আজীবন চলবে?
না, গর্ভাবস্থার পরে অনেক সময় এই ডায়াবেটিস নিজে থেকেই চলে যায়। তবে নিয়মিত ফলোআপ জরুরি।
৪. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কি ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়?
হ্যাঁ, পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়ে যায়, তাই লাইফস্টাইল মেইনটেইন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।