গর্ভধারণ একজন নারীর জীবনে এক অসাধারণ অনুভূতি, তবে এই সময় অসতর্কতা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। গর্ভাবস্থায় কিছু ভুল অভ্যাস ও জীবনযাত্রা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আজ আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিত, যা হবু মায়েদের অবশ্যই জানা উচিত।
গর্ভাবস্থায় কেন সতর্কতা জরুরি?
গর্ভাবস্থায় নারীর শরীর এবং মনে অনেক পরিবর্তন আসে। যদি এই সময় কিছু ভুল অভ্যাস করা হয়, তবে এটি মায়ের পাশাপাশি অনাগত শিশুর জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি, যাতে গর্ভধারণের সময় কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয়। সেই সাথে গর্ভবতী হলে করণীয় সকল কিছু মেনে চলতে হয়।

গর্ভাবস্থায় সতর্কতায় যা যা এড়িয়ে চলা উচিত:
১. ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
গর্ভাবস্থায় ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ায়।
২. কাঁচা বা অপরিষ্কার খাবার খাবেন না
কাঁচা মাছ, অপরিষ্কার খাবার বা সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। এটি ফুড পয়জনিং বা অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করবেন না
ক্যাফেইন গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যেতে পারে, যা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ভারী ওজন তুলবেন না
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কাজ করা বা ভারী বস্তু তোলা পেটের পেশির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৫. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ এড়িয়ে চলুন
গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৬. নিজের থেকে ওষুধ খাবেন না
কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু ওষুধ শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৭. রেডিয়েশন ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলুন
রেডিয়েশন বা কীটনাশক, রঙের গন্ধ ইত্যাদি গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসবের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।
৮. অপরিচিত ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ভ্রমণ করবেন না
গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ ভ্রমণ বা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যাওয়া শারীরিক ক্লান্তি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ পথ যাত্রা করা উচিত নয়।
৯. বেশি লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না
অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং অতিরিক্ত চিনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই পরিমিত লবণ ও চিনি গ্রহণ করা উচিত।
১০. উঁচু হিলের জুতা পরিহার করুন
গর্ভাবস্থায় ভারসাম্য ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, তাই উঁচু হিল পরলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরামদায়ক ও নিরাপদ জুতা ব্যবহার করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় সতর্কতা সংক্রান্ত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় কী?
উত্তর: ধূমপান, অ্যালকোহল, অপরিষ্কার খাবার, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক।
প্রশ্ন ২: গর্ভাবস্থায় কেন কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?
উত্তর: কাঁচা খাবারে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকতে পারে, যা মায়ের শরীরে সংক্রমণ ঘটিয়ে শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রশ্ন ৩: গর্ভাবস্থায় কতটুকু ক্যাফেইন নিরাপদ?
উত্তর: দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন না খাওয়াই ভালো, যা প্রায় এক কাপ কফির সমান।
প্রশ্ন ৪: গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কীভাবে কমানো যায়?
উত্তর: মেডিটেশন, প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো, বই পড়া বা পছন্দের কাজ করা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৫: গর্ভাবস্থায় কী ধরনের ব্যায়াম বিপজ্জনক?
উত্তর: ভারী ব্যায়াম, দৌড়ানো, বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্ট্রেচিং ও ভারোত্তোলন গর্ভাবস্থায় বিপজ্জনক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সতর্কতা মেনে চলা মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব সতর্কতা অনুসরণ করলে একজন হবু মা একটি সুস্থ ও ঝুঁকিমুক্ত গর্ভকালীন সময় উপভোগ করতে পারেন। সুস্থ মা মানেই সুস্থ শিশু তাই নিজেকে ভালোবাসুন, সতর্ক থাকুন
জেনে নিন: