মায়া যখন প্রথম জানতে পারে সে মা হতে চলেছে, তার মনে তখন মিশ্র অনুভূতি আনন্দ, ভয় আর অজানা এক উত্তেজনা। দিন দিন তার শরীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। নতুন জীবনের স্পন্দন অনুভব করার সাথে সাথে মায়া বুঝতে পারে, তার শরীরও যেন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে।
কিন্তু তার মনে সবসময় একটা প্রশ্ন ঘুরতো “আমি কি ঠিকভাবে গর্ভাবস্থার যত্ন নিচ্ছি? আমার প্রেগন্যান্সি কি সুস্থভাবে এগোচ্ছে?”
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মায়া জানতে পারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণের কথা, যেগুলো সুস্থ প্রেগন্যান্সির সংকেত বহন করে। আসুন, সেই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানি।

সুস্থ প্রেগন্যান্সির লক্ষণ:
সুস্থ প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিয়মিত বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা, গর্ভের আকার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া, ওজন বৃদ্ধি হওয়া (সাধারণত ১১-১৬ কেজি), এবং মায়ের খাওয়ার রুচি ফিরে আসা।
এছাড়া রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকা, প্রস্রাবে কোনো জ্বালাপোড়া না থাকা, এবং মানসিকভাবে শান্ত থাকা খুবই জরুরি। মায়ের মন ভালো থাকলে শিশুর বৃদ্ধিও ভালো হয়।
নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করানো অপরিহার্য। ভালোবাসা আর যত্নেই লুকিয়ে আছে সুস্থ মাতৃত্বের রহস্য।

১. নিয়মিত বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা
সাধারণত গর্ভাবস্থার ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে মায়েরা শিশুর প্রথম নড়াচড়া অনুভব করতে শুরু করেন। এটি প্রথমদিকে মৃদু অনুভব হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নিয়মিত নড়াচড়া শিশু স্বাভাবিক ও সুস্থ আছে এমনটাই নির্দেশ করে।
২. গর্ভের আকার বৃদ্ধি পাওয়া
গর্ভাবস্থার সাথে সাথে গর্ভের আকারও বৃদ্ধি পায়। প্রতি মাসে ডাক্তারি চেকআপে শিশুর বৃদ্ধি এবং ওজন পরীক্ষা করা হয়। যদি গর্ভের আকার বয়সের সাথে মিল রেখে বাড়ে, তবে এটি ভালো লক্ষণ।
৩. নিয়মিত ওজন বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থায় ধীরে ধীরে ওজন বাড়া স্বাভাবিক এবং দরকারি। সাধারণত ১১-১৬ কেজি ওজন বৃদ্ধি হওয়া নিরাপদ ধরা হয়। ওজন বৃদ্ধির হারও গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।
৪. বমিভাব ও ক্ষুধামন্দা কমে আসা
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বমিভাব থাকা স্বাভাবিক। তবে ধীরে ধীরে এটি কমে আসে এবং মায়ের খাওয়ার রুচি ফিরে আসে। এটি শরীরের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
৫. নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্ত পরীক্ষা
ডাক্তারের নিয়মিত পরামর্শ ও চেকআপ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা এবং রক্তের উপাদানগুলো পরীক্ষা করা সুস্থ প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম।
৬. মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের ভালো থাকা
মায়ের মন ভালো থাকা, উদ্বেগ কম থাকা ও ইতিবাচক চিন্তা করা প্রেগন্যান্সির স্বাস্থ্যের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে।
৭. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া না থাকা
গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে কোনো সমস্যা বা জ্বালাপোড়া না থাকা সুস্থ গর্ভাবস্থার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।

FAQ
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কবে থেকে অনুভব করা যায়?
সাধারণত ১৮-২৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো শিশুর নড়াচড়া অনুভব করা যায়। এটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গর্ভাবস্থায় ওজন কতটুকু বৃদ্ধি হওয়া উচিত?
গর্ভাবস্থার সময় ১১-১৬ কেজি ওজন বৃদ্ধি হওয়া নিরাপদ বলে ধরা হয়। তবে এটি মায়ের শারীরিক গঠন ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে নেওয়া যায়?
মনের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বই পড়া, গান শোনা, মেডিটেশন করা এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানো অত্যন্ত উপকারী।
সুস্থ প্রেগন্যান্সি মানেই শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মায়া যখন এই বিষয়গুলো বুঝতে শিখলো, তার মন অনেকটাই হালকা হলো। সে জানলো, এই যাত্রায় একটু সচেতনতা আর সঠিক তথ্যই তাকে সুস্থ ও সুন্দর মাতৃত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আপনার প্রেগন্যান্সি যাত্রা যেন আনন্দময় ও সুস্থ হয়, সেটাই আমাদের কামনা।